দেলদুয়ার এর রয়েছে সুপ্রাচীণ ঐতিহ্য ও ইতিহাস। নানা লোকজ শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ দেলদুয়ার উপজেলার ঐতিহ্য ও ইতিহাস গর্ব করার মত। দেলদুয়ারে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যমন্ডিত স্থান, ঐতিহ্য মন্ডিত প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন, যা কালের সাক্ষী ও ইতিহাস হয়ে দেলদুয়ারকে গর্বের সংগে টিকিয়ে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। এমন একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে আতিয়া। আতিয়া ঐতিহ্য মন্ডিত নানা কারণে। আজ হতে ২০০ বছর পূর্বে ইংরেজ শাসনামলের অতি গুরুত্বপূর্ণ থানাশহর ছিল আতিয়া। একসময় আতিয়া পরগনা হিসেবেও পরিচিত ছিল। সাধক পুরুষ, ধর্ম প্রচারক শাহান্শাহ্ বাবা আদম কাশ্মিরী (রাঃ) ছিলেন আতিয়া পরগনার শাসক। বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসাইন শাহ্ কর্তৃক তিনি এ পরগনার শাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন। আতিয়াতে তাঁর মাজার রয়েছে। প্রতিবছর মাজারে তিন দিন ব্যাপী ওরশ মোবারক হয়ে থাকে। ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত অর্থাৎ প্রায় চারশত বছরের প্রাচীন একটি মসজিদ রয়েছে আতিয়াতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ টাকার নোটে মসজিদটির ছবি মুদ্রিত আছে। ভেতরে ও বাইরের সব দেয়ালে টেরাকোটার নকশা অঙ্কিত অনুপম স্থাপত্য শিল্পকর্মে গড়া মসজিদটি আজও অক্ষত রয়েছে। ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে শাহান্শাহ্ বাবা আদম কাশ্মিরী (রাঃ) এর পোষ্য পুত্র সাঈদ খান পন্নী মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। আতিয়ার দক্ষিণে হিঙ্গানগর গ্রাম অবস্থিত। অনেকে হিঙ্গানগরকে রাজা কংশ নারায়ণের রাজধানী বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। তবে হিঙ্গনগর বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী বেত শিল্পের জন্য। বেত শিল্পের অন্যতম ঐতিহ্য হচ্ছে শীতল পাটি।
দেলদুয়ার উপজেলার আরও একটি ঐতিহ্যমন্ডিত স্থান হচ্ছে এলাসিন। আরব বংশোদ্ভুত বিশিষ্ট ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হুসাইন শাহ্ আল-ই-ইয়াছিন এর আল-ই-ইয়াছিন থেকেই এলাসিন নামের উৎপত্তি। এলাসিন ইংরেজ আমলে বিখ্যাত নদী বন্দর ও ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত ছিল। এখানে পাট বেলিং করা হত এবং পাট বেলিং এর ১৩টি কোম্পানী ছিল। একসময় এ বন্দরে নানা বিদেশী কোম্পানীর অনেক জাহাজ ও স্টীমার ভিড়তো। এ ছাড়া কারুকার্য শোভিত মৃৎ শিল্পের জন্যও এলাসিনের ঐতিহ্য ও সুনাম আজও টিকে আছে।
দেলদুয়ারের প্রাচীণ স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি। বাড়িটি দেখতে এখনও নতুনের মত এবং ভবনের সকল কারম্নকাজ চমৎকার। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী আব্দুল করিম গজনবী ও বৃটিশ সরকার কর্তৃক নাইট উপাধিতে ভূষিত আব্দুল হালিম খান গজনবী এই জমিদার বংশের সন্তান। সর্বাধিক জনপ্রিয়, বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘‘বিষাদ সিন্ধু’’ ঔপন্যাসিক মীর মোশারফ হোসেন এই জমিদার বাড়িতে বসেই রচনা করেছিলেন।
দেলদুয়ারের প্রধানতম কুটির শিল্প হচ্ছে তিনটি-তাঁত শিল্প, বেত শিল্প ও মৃৎশিল্প। টাঙ্গাইলের কুটির শিল্পের যে প্রাপ্তি বা অর্জন তার সিংহভাগ দাবীদার দেলদুয়ার নিঃসন্দেহে। আজ হতে শতাধিক বছর আগে টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পের ধারা সূচিত হয়েছিল এ দেলদুয়ার থেকেই। তাঁত শিল্পের আদি তাঁতী হিসেবে খ্যাত বসাকরা সর্বপ্রথমে দেলদুয়ারের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে পাথরাইল, নলশোঁধা, চন্ডী, বিষ্ণপুরে বসতি স্থাপন করে তাঁতের কাজ শুরম্ন করেন বলে শোনা যায়। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের শাড়ির সিংহভাগই তৈরি হয় দেলদুয়ার উপজেলায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস